আল্লাহ তায়ালার রহমতের ব্যাপকতা কতটুকু?
আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সবচেয়ে সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন। এরপর তার জন্য ছড়িয়ে দিয়েছেন অফুরন্ত রহমত। আল্লাহর রহমতের কিছু নমুনা লক্ষ্য করি..
তিনিই তোমাদের জন্য মাটির শয্যা বিছিয়েছেন, আকাশের ছাদ তৈরি করেছেন, ওপর থেকে পানি বর্ষণ করেছেন এবং তার সাহায্যে সব রকমের ফসলাদি উৎপন্ন করে তোমাদের আহার যুগিয়েছেন। কাজেই একথা জানার পর তোমরা অন্যদেরকে আল্লাহর প্রতিপক্ষে পরিণত করো না। (সূরা বাকারা ২২)
শুধু আল্লাহ তায়ালার পক্ষেই সম্ভব
আল কুরআনে অসংখ্য স্থানে আল্লাহ তায়ালা তার রহমতের কথা বর্ণনা করেছেন। এই রহমতগুলো এমন যে তিনি ছাড়া আর কারো পক্ষে দেয়া সম্ভব না।
একথা কি সত্য নয়, আমি জমিনকে বিছানা বানিয়েছি? পাহাড়গুলোকে গেঁড়ে দিয়েছি পেরেকের মতো? তোমাদের (নারী ও পুরুষ) জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি? তোমাদের ঘুমকে করেছি শান্তির বাহন, রাতকে করেছি আবরণ এবং দিনকে জীবিকা আহরণের সময়? তোমাদের ওপর সাতটি মজবুত আকাশ স্থাপন করেছি এবং একটি অতি উজ্জ্বল ও উত্তপ্ত বাতি সৃষ্টি করেছি? আর মেঘমালা থেকে বর্ষণ করেছি অবিরাম বৃষ্টিধারা, যাতে তার সাহায্যে উৎপন্ন করতে পারি শস্য, শাক সবজি ও নিবিড় বাগান? (সূরা নাবা ৬-১৬)
আল্লাহ তায়ালার বরকত নেই কোথায়?
সূরা আর রহমানে আল্লাহ তায়ালা ৩১ বার প্রশ্ন করেছেন, মানুষ তাঁর কোন কোন নিয়ামতকে অস্বীকার করবে। আল্লাহর বরকত কখনো গুণে শেষ করা যাবে না।
যদি তোমরা আল্লাহর নিয়ামতসমূহ গুণতে চাও তাহলে গুণতে পারবে না। আসলে তিনি বড়ই ক্ষমাশীল ও করুণাময়। (সূরা নাহল ১৮)
রহমান ও রহিম শব্দের অর্থ
সূরা ফাতিহাতে মহান আল্লাহর পরিচয় সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি রহমান ও রহিম। দুটো শব্দের অর্থ কাছাকাছি। অর্থাৎ দয়ালু।
রহমান বলতে তাৎক্ষণাত আর রহিম বলতে স্থায়ী দয়া বুঝায়। যেমন ভিক্ষুকের প্রতি আমরা তাৎক্ষণাত দয়া দেখাই। আবার দেখা যায় মা তার সন্তানের প্রতি কোনো কারণে তাৎক্ষণাত রেগে আছেন কিন্তু আদতে তিনি সন্তানকে ভালোবাসেন। এই ভালোবাসা স্থায়ী।
তাৎক্ষণাত ও স্থায়ী রহমত, বরকত, নিয়ামত আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য ছড়িয়ে রেখেছেন। আর তাঁর ভান্ডার তো অসীম।
কাফেরদের জন্যেও আল্লাহর রহমত প্রযোজ্য
দুনিয়াতে আল্লাহর হুকুম মানতে অস্বীকার করলেও আল্লাহ তায়ালা তাঁর রহমত থেকে বঞ্চিত করেন না। এই ব্যাপারটি পরিষ্কার হয়েছে নবী ইব্রাহিম আ. এর দু’আর পর আল্লাহ তায়ালার জবাবের মাধ্যমে।
আর এও স্মরণ করো যে, ইবরাহিম দু’আ করেছিল, ‘হে আমার রব! এই শহরকে শান্তি ও নিরাপত্তার শহর বানিয়ে দাও। আর এর অধিবাসীদের মধ্য থেকে যারা আল্লাহ ও আখিরাত মানবে তাদের সব রকম ফলের আহার্য দান করো ৷’ জবাবে তার রব বললেন, ‘আর যে মানবে না, দুনিয়ার গুটিকয় দিনের জীবনের সামগ্রী আমি তাকেও দেবো। কিন্তু সব শেষে তাকে জাহান্নামের আযাবের মধ্যে নিক্ষেপ করবো এবং সেটি নিকৃষ্টতম আবাস। (সূরা বাকারা ১২৬)
কিন্তু মানুষ বড়ই অকৃতজ্ঞ
আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমত আমরা অনুভব করতে পারি? মনে হয় পারি না। অনুভব করলে তাঁর নাফরমানী করি কীভাবে? এজন্য আল্লাহর রহমত স্মরণ করা দরকার এবং অবশ্যই আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে।
মানুষের ওপর যখন কোনো বিপদ আসে তখন সে তার রবের দিকে ফিরে যায় এবং তাঁকে ডাকে। কিন্তু যখন তার রব তাকে নিয়ামত দান করেন তখন সে ইতিপূর্বে যে বিপদে পড়ে তাঁকে ডাকছিল তা ভুলে যায় এবং অন্যদেরকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করতে থাকে যাতে তারা আল্লাহর পথ থেকে তাকে গোমরাহ করে। (হে নবী!) তাকে বলো, তোমার কুফরী দ্বারা অল্প কিছুদিন মজা করে নাও। নিশ্চিতভাবেই তুমি দোজখে যাবে। (সূরা জুমার ৮)
এরপরও আল্লাহ তায়ালা দয়াময়
আর হে নবী! আমার বান্দা যদি তোমার কাছে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, তাহলে তাদেরকে বলে দাও, আমি তাদের কাছেই আছি। যে আমাকে ডাকে আমি তার ডাক শুনি এবং জবাব দেই, কাজেই তাদের আমার আহবানে সাড়া দেয়া এবং আমার ওপর ঈমান আনা উচিত একথা তুমি তাদের শুনিয়ে দাও, হয়তো সত্য-সরল পথের সন্ধান পাবে। (সূরা বাকারা ১৮৬)
আসুন মহান আল্লাহর রহমতের শুকরিয়া আদায় করি। ভুল ত্রুটির জন্য ক্ষমা চাই। সর্ববস্থায় আল্লাহর নাফরমানী থেকে দূরে থাকি।


0 Comments
Do not post spam link in the comment box