আল্লাহর দাসত্ব-ই প্রকৃত স্বাধীনতা
গায়ের রঙ নিয়ে একসময় আমেরিকা ছিল দুই ভাগে বিভক্ত। কালোদের ওপর সাদা চামড়ার ব্যক্তিরা অত্যাচার চালাতো। কালোদের সাথে দাসের মতো আচরণ করতো। দাসত্ব থেকে বাঁচতে একসময় কৃষ্ণাঙ্গরা ব্যাপক আন্দোলন শুরু করে। সেই আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তুখোড় বক্তা ম্যালকম এক্স।
জন্মসূত্রে ম্যালকম এক্স ছিলেন খ্রিস্টান। জেলখানায় বন্দি জীবন কাটানোর সময় তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ইসলাম গ্রহণের পর তার সবচেয়ে বেশি অস্বস্তি হয়েছিল সিজদা করতে।
ম্যালকম এক্স কেনো এমনটি বলেছিলেন? কারণ তিনি দাসত্ব বিরোধী আন্দোলন করতেন। অথচ ইসলাম গ্রহণ করে তিনি দাসমুক্ত হতে পারলেন না। তার নতুন পরিচয় হলো তিনি আল্লাহ তায়ালার দাস। প্রথম প্রথম এটা তার জন্য সহজ ছিল না। কারণ মানুষ জন্মগতভাবে স্বাধীনচেতা। কখনো সে শৃঙ্খলায় আবদ্ধ হতে চায় না।
তবে বাস্তবতা হল, সবাই-ই দাস। দাসত্ব আমাদের অস্থি, মজ্জা ও রক্তে। কেউ দাস অর্থের। কেউ ক্ষমতার। কেউবা খ্যাতির দাস। প্রতিহিংসাকেও কেউ কেউ প্রভু বানায়ে ফেলে। জীবনে চলার পথে প্রতিনিয়ত নিজের উন্নত শির ঠুকে দেয় অর্থ, প্রতিপত্তি, খ্যাতি, হিংসা, অহংকার ইত্যাদি নানাবিধ অদৃশ্য প্রভুর পায়ে।
কেউ কেউ ধুলো মাটি দিয়ে প্রতিমা বানিয়ে মাথা ঠুকে দিচ্ছে। কারণ সে তার প্রভুকে দেখতে চায়। অথচ মাথা খাটিয়ে চিন্তাভাবনা করছে না। তার ওই মন বুঝতে পায় না যে, নিখুঁত বাস্তবতার এই পৃথিবীর প্রতিটি অধ্যায় এক একটি সুনিপুণ মহাকাব্য। কে এই মহাকাব্যের মহাকবি? সবার উচিত নিজেকে এই প্রশ্ন করা।
এত এত দৃশ্যমান কিংবা অদৃশ্য প্রভুর পায়ে মাথা নত না করে এক, অদ্বিতীয়, অবিনশ্বর ও অনাদি (অতি সনাতন) আল্লাহর পায়ে মাথা নত করা কি যৌক্তিক না?
হ্যাঁ অবশ্যই যৌক্তিক। এক আল্লাহর কাছে শির নত করলে বহু প্রভুর ঝামেলা থেকে মানুষ মুক্তি লাভ করে। কারণ একত্ববাদ জাগতিক জঞ্জাল থেকে মানুষকে মুক্তি দেয়। তার ভেতরে জাগ্রত করে নান্দনিক জীবনবোধ।
এছাড়া মনের অলিগলিতে লুকিয়ে থাকা হিংসা, অহংকারের কীটপতঙ্গ ভেসে যায় অনুকম্পার জোয়ারে। আল্লাহর প্রতি সিজদা তাকে নামিয়ে আনে সাধারণের কাতারে। নিজের অহমবোধ, বড়ত্ব ধুলোয় মিশিয়ে দেয় আল্লাহর প্রতি এই ভক্তি। প্রার্থনার মধুর সুধা মানবাত্মাকে করে পরিশীলিত ও প্রাঞ্জল।
তাই এক আল্লাহর কাছে মাথা নত করলে মানুষ মুক্তি পাবে 'বহু'-এর করাল গ্রাস থেকে। এটাই কি প্রকৃত স্বাধীনতা নয়?
হ্যাঁ এটাই প্রকৃত স্বাধীনতা। আল্লাহ তায়ালাকে সিজদা করার মাধ্যমেই দুনিয়াবি সকল দাসত্ব থেকে মানুষ মুক্তি পায়। মানুষ যাদেরকে বিশাল কিছু মনে করে যেমন চাঁদ, সূর্য তারাও আল্লাহ তায়ালাকে সিজদা করে। সূরা হামিম আস সিজদার ৩৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলছেন,
‘এই রাত ও দিন এবং চন্দ্র ও সূর্য আল্লাহর নিদর্শনের অন্তভুক্ত। সূর্য ও চাঁদকে সিজদা করো না, বরং সেই আল্লাহকে সিজদা করো যিনি তাদের সৃষ্টি করেছেন, যদি সত্যিই তোমরা তাঁর ইবাদতকারী হও।’
অর্থাৎ যা কিছু আল্লাহর সৃষ্টি তার সবই আল্লাহকে সিজদা করছে। এমনকি প্রত্যেক বস্তুর ছায়াও আল্লাহ তায়ালাকে সিজদা করে। সূরা রাদ-এর ১৫ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলছেন,
‘তিনিই আল্লাহ, যাকে জমিন ও আসমানের সবকিছু ইচ্ছায় বা বাধ্য হয়ে সিজদা করছে এবং সব জিনিসের ছায়া সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর সামনে নত হয়।’
অর্থাৎ পৃথিবী ও আকাশের সমস্ত সৃষ্টি আল্লাহকে সিজদা করে। শুধুমাত্র মানুষ ও জিন জাতিকে আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন স্বাধীনতা। আর এই স্বাধীনতা মূলত তাদের জন্য পরীক্ষা। আল্লাহ তায়ালাকে সিজদা করলে তারা পরীক্ষায় পাশ করবে। প্রতিদানে দুনিয়াতে আল্লাহ ছাড়া আর সবার দাসত্ব থেকে মুক্তি পাবে এবং পুরস্কার হিসেবে মৃত্যুর পর পরকালে পাবে চিরশান্তির স্থান জান্নাত।
লেখক: আবদুল হাই ভূঁইয়া


0 Comments
Do not post spam link in the comment box