"ঘুমানোর সময় সুন্নত-আমল সমূহ "
☛০১. ঘরের দরজা আল্লাহর নামে (বিসমিল্লাহ বলে) বন্ধ করা:
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন সন্ধ্যা হয়, তখন তোমাদের সন্তানদের ঘরে আটকে রাখ। কেননা এ সময় শয়তানরা ছড়িয়ে পড়ে। তবে রাতের কিছু অংশ অতিক্রম করলে তখন তাদের ছেড়ে দিতে পার। আর ঘরের দরজা বন্ধ করবে। কেননা, শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না। আর তোমরা আল্লাহ্র নাম নিয়ে তোমাদের মশকের মুখ বন্ধ করবে এবং আল্লাহ্র নাম নিয়ে তোমাদের পাত্রগুলোকে ঢেকে রাখবে, কমপক্ষে পাত্রগুলোর উপর কোন বস্তু আড়াআড়ি করে রেখে। আর (শয্যা গ্রহণের সময়) তোমরা তোমাদের প্রদীপগুলো নিভিয়ে দেবে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২১২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১০৮)
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৬২৩
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
☛০৩. ডান কাত হয়ে শোয়া:
বারাআ ইবনু 'আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন নিজ বিছানায় বিশ্রাম নিতে যেতেন, তখন তিনি ডান পাশের উপত নিদ্রা যেতেন এবং বলতেনঃ হে আল্লাহ! আমি আমার সত্তাকে আপনার কাছে সমর্পণ করলাম, আর আমার বিষয় ন্যস্ত করলাম আপনার দিকে এবং আমার চেহারা আপনারই দিকে ফিরিয়ে দিলাম, আপনার রাহমাতের আশায়। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি শয়নকালে এ দু'আগুলো পড়বে, আর এ রাতেই তার মৃত্যু হবে সে স্বভাব ধর্ম ইসলামের উপরই মরবে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৬৩)
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৬৩১৫
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন জানাবাতের অবস্থায় ঘুমাতে ইচ্ছা করতেন তখন তিনি লজ্জাস্থান ধুয়ে সালাতের উযূর মত উযূ করতেন।
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৮৮
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
☛০৫. সাধারণত সতর খোলা অবস্থায় না শোয়া।
☛০৬. বিনা কারণে উপুড় হয়ে না শোয়া।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন , রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জনৈক ব্যক্তিকে পেটের উপর হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে বললেনঃ আল্লাহ তাআলা এ রকম শোয়া পছন্দ করেন না।
হাসান সহীহঃ মিশকাত (৪৭১৮, ৪৭১৯)
জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২৭৬৮
☛০৭. ঘুমানোর সময় আগুনের বাতি জ্বালিয়ে না রাখা:
সালিম (রহঃ) হতে তার বাবা থেকে বর্ণিতঃ
তিনি (আবদুল্লাহ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শোয়ার সময় তোমরা তোমাদের ঘরে আগুন জ্বালিয়ে রেখ না।
সহীহ্, সহীহুল আদাব (৯৩৮), নাসা-ঈ
ফুটনোটঃ
এ হাদীসটিকে আবূ ঈসা হাসান সহীহ্ বলেছেন।
জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১৮১৩
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
☛০৮. দুঃস্বপ্ন দেখলে পার্শ্ব পরিবর্তন করে শোয়া:
ইয়াহ্ইয়া ইবনু সা’ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
উপরোল্লিখিত সূ্ত্রে হাদীস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু বর্ণনাকারী আস্-সাকাফী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে আছে, (আমার উস্তাদ) বর্ণনাকারী আবূ সালামাহ্ (রাঃ) বলেছেন, ‘আমি এমন স্বপ্নও দেখতাম যা.....। আর বর্ণনাকারী আল-লায়স ও ইবনু নুমায়র (রাঃ) সূ্ত্রে বর্ণিত হাদীসে আবূ সালামাহ্ (রাঃ) এর কথা হতে হাদীসের শেষাংশ নেই এবং বর্ণনাকারী ইবনু রুম্হ্ এ হাদীসের রিওয়ায়াতে বর্ধিত বলেছেন যে, আর সে (স্বপ্নদ্রষ্টা) লোক যে পাশে ঘুমাচ্ছিল সে পাশ পরিবর্তন করে অন্যপাশে ঘুমাবে। (ই.ফা. ৫৭০৪, ই.সে. ৫৭৩৬)
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৭৯৪
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
☛০৯. দুঃস্বপ্ন দেখলে শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া: -
أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ
আবূ কাতাদাহ্ (রহঃ) সূ্ত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, ভাল স্বপ্ন আল্লাহ্র তরফ থেকে আর মন্দ স্বপ্ন শাইতানের তরফ থেকে। সুতরাং যে ব্যক্তি কোন স্বপ্ন দেখল আর এতে কোন কিছু পছন্দ হলো না, তখন সে যেন তার বাম পাশে থু থু ফেলে এবং শাইতান (এর অনিষ্ট) হতে আল্লাহ্র আশ্রয় প্রার্থনা করে, (তাহলে) তা তাকে কোন সমস্যায় ফেলবে না। আর কোরো কাছে ঐ স্বপ্নের কথা বর্ণনা করবে না। আর যদি কোন ভাল স্বপ্ন দেখে তাহলে সু-সংবাদ গ্রহণ করবে। আর যাকে সে মুহাব্বাত করে এমন ব্যক্তি ব্যতীত কারো নিকট তা বর্ণনা করবে না। (ই.ফা.৫৭০৫, ই.সে. ৫৭৩৭)
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৭৯৫
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
☛১০. দুঃস্বপ্ন কাউকে না বলা:
আবূ কাতাদাহ্ (রহঃ) সূ্ত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, ভাল স্বপ্ন আল্লাহ্র তরফ থেকে আর মন্দ স্বপ্ন শাইতানের তরফ থেকে। সুতরাং যে ব্যক্তি কোন স্বপ্ন দেখল আর এতে কোন কিছু পছন্দ হলো না, তখন সে যেন তার বাম পাশে থু থু ফেলে এবং শাইতান (এর অনিষ্ট) হতে আল্লাহ্র আশ্রয় প্রার্থনা করে, (তাহলে) তা তাকে কোন সমস্যায় ফেলবে না। আর কোরো কাছে ঐ স্বপ্নের কথা বর্ণনা করবে না। আর যদি কোন ভাল স্বপ্ন দেখে তাহলে সু-সংবাদ গ্রহণ করবে। আর যাকে সে মুহাব্বাত করে এমন ব্যক্তি ব্যতীত কারো নিকট তা বর্ণনা করবে না। (ই.ফা.৫৭০৫, ই.সে. ৫৭৩৭)
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৭৯৫
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
ঘুমানোর পূর্বে কিছু আমল সমূহ:
[যারা রাতে ঘুমে ভয় পান বা দুঃস্বপ্ন দেখেন তাদের জন্য এই আমলগুলো খুব কার্যকরী]
১) ঘুমানোর দোয়া পড়া: আল্লাহুম্মা বিসমিকা আ'মুতু ওয়া আহইয়া') اَللَّهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوتُ وَأَحْيَا
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার নামে মরি আবার তোমার নামেই বাঁচি।
(বুখারী ৬৩১৪, মুসলিম ৭০৬২)।
২)ঘুমানোর আগে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক্ব ও সুরা নাস একবার করে পড়ে দুই হাতে ফুঁ দিয়ে মাথা থেকে দেহ পর্যন্ত যত দূর যায় বুলাবে।তারপর ডান হাত ও বাম হাত বুলাবে। যেকোন (ক্ষতিকর) জিনিস থেকে নিরাপত্তার জন্য এটা যথেষ্ট হবে। (মুসলিম ৪/১৭২৩, তিরমিযী ৩৫৭৫, আবূ দাউদ ৫০৮২, নাসায়ী ৫৪২৮, ৫৪২৯)।
৩। ৩৩ বার سُبْحَانَ اللّٰهِ’ ৩৩ বার 'ٱلْحَمْدُ لِلَّٰهِ' এবং ৩৪ বার ‘’,اَللهُ اَكْبَر " পাঠ: ‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃফাতিমাহ্ (রাঃ) চাক্কি ঘুরাতে গিয়ে তাঁর হাতে ব্যাথা অনুভব করলেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে বন্দি এসেছিল। তাই তিনি বন্দি হতে একজন খাদিমের জন্য নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গেলেন, কিন্তু নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে পেলেন না। তিনি ‘আয়িশা (রাঃ)-এর সাথে দেখা করে তাঁকে ব্যাপারটি অবহিত করলেন। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আগমন করলে তখন ‘আয়িশা (রাঃ) তাঁর নিকট ফাতিমাহ্ (রাঃ)-এর তাঁর নিকট আগমনের বিষয়টি অবহিত করলেন। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট আসলেন। এমন সময় আমরা আমাদের শয্যাগ্রহণ করেছিলাম। অতঃপর আমরা উঠতে লাগলাম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “তোমরা তোমাদের যথাস্থানে থাকো। অতঃপর তিনি আমাদের দু’জনের মাঝে বসলেন। এমনকি আমি তাঁর পা মুবারকের শীতলতা আমার সীনার মধ্যে অনুভব করলাম। অতঃপর তিনি বললেন, আমি কি তোমাদের এমন বিষয় শিখিয়ে দিব না, যা তোমরা প্রার্থনা করছিলে তার চেয়ে উত্তম? যে সময় তোমরা তোমাদের শয্যাগ্রহণ করবে তখন ৩৪ বার ‘’,اَللهُ اَكْبَر " ৩৩ বার ‘’سُبْحَانَ اللّٰهِ"এবং ৩৩ বার ‘ٱلْحَمْدُ لِلَّٰهِ' পড়ে নিবে। এটি তোমাদের জন্য খাদিমের চেয়ে উত্তম।” (ই.ফা. ৬৬৬৭, ই.সে. ৬৭২০)
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৮০৮
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
৪) সূরা কাফিরূন পাঠ করা, এতে শির্ক থেকে বেঁচে থাকা যায় :
ফারওয়াহ ইবনু নাওফাল (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাওফাল (রাঃ)-কে বলেনঃ তুমি ‘‘কুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরূন’’ সূরাটি পড়ে ঘুমাবে। কেননা তা শিরক থেকে মুক্তকারী।(আবুদাউদ:৫০৫৫)
৫। কুরআনের সবচেয়ে বড় মর্যাদাপূর্ণ আয়াত 'আয়াতুল কুরসী' । যে ব্যক্তি ঘুমানোর সময় ইহা পাঠ করবে তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন রক্ষক নিযুক্ত করা হবে এবং সকাল পর্যন্ত তার কাছে শয়তান আসতে পারবে না।(বুখারী হা/২৩১১)। শয়ন করে ‘আয়াতুল কুরসী পাঠ করলে আল্লাহর তরফ থেকে এক রক্ষী নিযুক্ত হয়ে যায় এবং শয়তান ঐ পাঠকারীর নিকটবর্তী হতে পারে না। (বুখারী হা/২৩১১)।
৬। রাতে 'সূরা বাকারা'র শেষ ২ টি আয়াত পাঠ করা: বাদ্রী সাহাবী আবূ মাস‘উদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সূরা বাকারার শেষে এমন দু’টি আয়াত রয়েছে যে ব্যক্তি রাতের বেলা আয়াত দু’টি তিলাওয়াত করবে তার জন্য এ আয়াত দু’টোই যথেষ্ট। অর্থাৎ রাত্রে কুরআন মাজীদ তেলাওয়াত করার যে হাক রয়েছে, কমপক্ষে সূরাহ বাকারার শেষ দু’টি আয়াত তেলাওয়াত করলে তার জন্য তা যথেষ্ট। ‘আবদুর রহমান (রহঃ) বলেন, পরে আমি আবূ মাস‘উদের সঙ্গে দেখা করলাম। তখন তিনি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করছিলেন। এ হাদীসটির ব্যাপারে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি সেটা আমার নিকট বর্ণনা করলেন। [৫০০৮, ৫০০৯, ৫০৪০, ৫০৪১; মুসলিম ৬/৪৩, হাঃ ৮০৭] (আ.প্র. ৩৭১১, ই.ফা. ৩৭১৫)
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৪০০৮

0 Comments
Do not post spam link in the comment box