যেসব ধারণা করলে গুনাহ হয়

 

যেসব ধারণা করলে গুনাহ হয়



মানুষের সম্পর্কে ভুল ধারণা করা আমাদের অভ্যাস হয়েগেছে। আমরা অনুমান করে অন্যদের দোষী মনে করি। এই নিয়ে আলোচনায় মশগুল হই এবং সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। কিন্তু এর পরিণতি ভালো হয় না। এভাবে পরস্পরের সাথে সম্পর্ক নষ্ট হয়।



অথচ ইসলাম কিছু কাজকে একযোগে খারাপ বলেছে। সূরা হুজরাতের ১২ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে- 

হে ঈমানদারগণ, তোমরা বেশি ধারণা ও অনুমান করা থেকে বিরত থাকো। কারণ কোন কোন ধারণা ও অনুমান গোনাহ। দোষ খুঁজো না। আর তোমাদের কেউ যেন কারো গীবত না করে। এমন কেউ কি তোমাদের মধ্যে আছে, যে তার নিজের মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে? তোমরা তো অপছন্দই করবে। আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ‌ অধিক পরিমাণে তাওবা কবুলকারী এবং দয়ালু। (সূরা হুজরাত ১২)

এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের প্রধাণত তিনটি কাজ থেকে বিরত থাকতে আদেশ করেছেন। 

১. বেশি বেশি ধারণা বা অনুমান করা।

২. অন্যের দোষ খোঁজা।

৩. অন্যের দোষ মানুষের কাছে বলা বা গীবত করা। 


এই আয়াতে যে কাজগুলো থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে তার প্রায় সবগুলোই কিছু মানুষের মধ্যে পাওয়া যায়। কারণ এই তিনটি কাজ একটি আরেকটির সাথে সম্পর্কিত। 



দেখা যায়, কোনো ব্যক্তি বা ঘটনা সম্পর্কে নেতিবাচক অনুমান শুধু নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। এইসব অনুমানের কথা আমরা অন্যদের বলি। সত্য মিথ্যা যাচাই না করে তারাও সেসব অন্যদের জানায়। এভাবে বিদ্যুৎ বেগে মানুষের নামে মিথ্যা অপবাদ ছড়িয়ে যায়। 


কারও সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা এলে আমরা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য তার দোষ খুঁজি। এরপর নিজের ধারণা সঠিক প্রমাণ করার জন্য কোনো দোষ পেলে সেটা অন্যদের উৎসাহের সাথে জানাই ।  


এভাবে ভুল ধারণা থেকে অন্যের দোষ খোঁজা, এরপর সেই দোষ অন্যদের বলা এভাবে তিনটি অপরাধ হয়ে যায়। একটি গোনাহ থেকে আমাদের অজান্তেই তিনটি গোনাহ হয়ে যায়। 


এজন্য আল্লাহ একসাথে এই তিনটি কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। 

একই বিষয়ে রাসূল সা. এর একটি হাদিস আমরা বুখারি ও মুসলিম শরীফে পাই। 

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা অনুমান থেকে বেঁচে থেকো। কারণ অনুমান বড় মিথ্যা ব্যাপার। আর কারো দোষ খুঁজো না, গোয়েন্দাগিরী করো না, একে অন্যকে ধোঁকা দিও না, একে অন্যকে হিংসা করো না, একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ করো না এবং একে অন্যের বিরোধিতা করো না। বরং সবাই আল্লাহর বান্দা ভাই ভাই হয়ে থেকো।  


ভুল ধারণা থেকে বাঁচতে আমরা কী করব?

জীবনের প্রয়োজনে আমাদের অনেকসময় মানুষ সম্পর্কে পূর্ব ধারণার প্রয়োজন হয়। কারও সাথে লেন-দেন করার আগে আমরা বোঝার চেষ্টা করি লোকটি কেমন হবে।


এক্ষেত্রে আমাদের মনে রাখতে হবে, মুমিন হিসেবে অন্য একজন মুমিনের প্রতি সুধারণা রাখা আমাদের কর্তব্য। এমনকি কারও সম্পর্কে মন্দ কিছু শুনলেও ভাল ধারণা রাখতে হবে। পবিত্র কুরআনের সূরা নুরের ১২ নাম্বার আয়াতে এমনটিই বলা হয়েছে। 


এখন প্রশ্ন হলো, যদি সবার প্রতি আমরা ভালো ধারণা রাখি তাহলে তো অনেক সময় বিপদের ভয় আছে।

উত্তরে আমরা বলব, নেতিবাচক ধারণা আর সাবধানতা দুটি আলাদা বিষয়। 


কারো সাথে লেনদেন করার সময় আমাদের সাবধান থাকা দরকার। নেতিবাচক ধারণা রাখা দরকার নেই। দোকান থেকে কোনো কিছু কেনার সময় আমরা ভালো করে দেখে নিব। টাকা দেয়া-নেয়ার সময় গুণে নিব। কাউকে কাজ দেয়ার সময় তার সম্পর্কে জেনে যাচাই করে নিব। 


সূরা বাকারার ২৮২ আয়াত অনুযায়ী ঋণ লেনদেনের ক্ষেত্রে লেখালেখি করে নেয়া আবশ্যক। কল্পনা করা যায়, এই নির্দেশনা এসেছে এখন থেকে ১৫শত বছর আগে? বিষয়টা এমন নয় যে, লিখিত দলিল ও সাক্ষী শত্রুদের সাথে লেনদেনের সময় রাখতে হবে। বরং মুমিনরা নিজেদের মধ্যে লেনদেনের সময় এই নীতি অনুসরণ করবে।


আবু হুরাইরাহ হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রকৃত মু’মিন একই গর্ত থেকে দু’বার দংশিত হয় না। (বুখারি ও মুসলিম)


এই হাদিসের ব্যাখ্যা খুব গুরুত্বপূর্ণ। একই গর্ত থেকে দুবার দংশিত হওয়ার অর্থ হচ্ছে, একই ভুল বার বার করা। একই ব্যক্তির মাধ্যমে দু বার প্রতারিত হওয়া।


রাসূল সা. এই হাদিসের মাধ্যমে বুঝাতে চেয়েছেন মুমিন হবে বুদ্ধিমান ও সাবধানী। এক ভুল সে দুবার করবে না।


তার মানে আমরা বলতে পারি, লেন-দেনের ক্ষেত্রে আমরা সাবধান থাকব, যাচাই করে নিব। কিন্তু কারও সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা রাখব না। 


নেতিবাচক ধারণার উদাহরণ 

আমাদের সমাজে নেতিবাচক ধারণা করতে মানুষ অভ্যস্ত। এ নিয়ে একটা কৌতুক বলে আজকের লেখা শেষ করছি। 


এক সাংবাদিক একবার পত্রিকায় লিখল, ‘গম চুরির দায়ে ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার গ্রেফতার’। 

অথচ সেই ইউপি সদস্য গ্রেফতার হননি। তিনি এই নিউজ পড়ে তাজ্জব হয়ে গেলেন। সাংবাদিককে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আমার সম্পর্কে এমন নিউজ কেন করেছ? 


সেই সাংবাদিক উত্তরে বললো, গতকাল বাজারে দেখলাম আপনার দুই পাশে দুই পুলিশ। ভাবলাম তারা আপনাকে গ্রেফতার করতে এসেছে। 


ইউপি সদস্য অবাক হয়ে বললেন, দুই পাশে দুই পুলিশ থাকলেই কি মানুষ গ্রেফতার হয়ে যায়? আর গম চুরি তুই কীভাবে পাইলি?


সাংবাদিক উত্তরে বললো, ইউপি সদস্য আর কীজন্য গ্রেফতার হবে! মনে মনে ভাবলাম, নিশ্চয় আপনি গম চুরি করেছেন।


এভাবে নেতিবাচক ধারণা আমাদের মধ্যে অনেক সমস্যা সৃষ্টি করে। তাই সবারই উচিত ধারণা-অনুমান থেকে দূরে থাকা।  


লেখক: নাজমুস সাকিব

Post a Comment

0 Comments