নফসকে নিয়ন্ত্রণ করার উপায় ৬ টি পর্ব ( পর্ব-৫ )

 --------------নফসকে নিয়ন্ত্রণ করার উপায় - পর্ব-৫ | 


হযরত ইমাম গাজ্জালী (রাহঃ) -

 







।। প্রবৃত্তিকে তিরস্কার করার নিদর্শন ॥ পর্ব -৫






হে প্রবৃত্তি। শোন, হয়ত তুমি এরূপ ধারণায় নিশ্চিন্ত রহিয়াছ যে, তুমি মা'রেফাতের আলোর আশ্রয় গ্রহণ না করিলেও অর্থাৎ, তত্ত্বজ্ঞানের আলোকে নিজ হৃদয়কে সজ্জিত না করিলেও মৃত্যুর পরে সাংসারিক কামনা ও লোভের অগ্নি তোমার অন্তরের মর্মস্থলকে স্পর্শ করিতে পারিবে না। তোমার ইত্যাকার ধারণাকে সেই ব্যক্তির ধারণার সহিত তুলনা করা যাইতে পারে, যে ব্যক্তি মনে করে যে, শীতবস্ত্র পরিধান না করিলেও আল্লাহ্ তা'আলার অনুগ্রহে ‘চিলীর’ প্রচণ্ড শীতের প্রকোপ আমার দেহকে স্পর্শ করিবে না। এই ব্যক্তি গণ্ড মূর্খ। তাহার এতটুকুও জ্ঞান নাই যে, আল্লাহ্ তা'আলা শীত ঋতুতে শীত সৃষ্টি করিয়াছেন, তন্নিবারণের জন্য আবার মানুষকে নানা প্রকার শীতবস্ত্র প্রস্তুত প্রণালী শিখাইয়া দিয়াছেন এবং তজ্জন্য বিভিন্ন প্রকারের প্রয়োজনীয় উপকরণগুলিও যোগাইয়া দিয়াছেন। ইহাই আল্লাহ্ তাআলার অনুগ্রহ। শীতবস্ত্র পরিধান না করিলেও প্রচণ্ড শীতের মধ্যে শীত নিবারণ করিয়া দেওয়া আল্লাহ্ তা'আলার অনুগ্রহ নহে।




হে প্রবৃত্তি! সাবধান! এমন ধারণা কখনও করিও না যে, তোমার অবাধ্যতাচরণের দরুন ক্রুদ্ধ হইয়াই আল্লাহ্ তা'আলা তোমাকে তোমার পাপের শাস্তি প্রদান করিবেন, যাহাতে তুমি এ কথা বলিবার সুযোগ পাইতে পার যে, আমার পাপানুষ্ঠানে আল্লাহ্ তা'আলার সুমহান সত্তার কি ক্ষতি হয়? আল্লাহ্ তা'আলা ক্রুদ্ধও হন না এবং ক্রোধের বশবর্তী হইয়া কোন পাপীকে শাস্তিও প্রদান করেন না; বরং তোমার মধ্যে যে লালসা ও কামনা রহিয়াছে তাহারই কারণে তোমার মধ্যে দোযখের অগ্নি উৎপন্ন হইয়া তোমাকে দগ্ধ করিতে থাকিবে। লালসা ও কামনার প্রখর তেজ কমাইতে না পারিলে তুমি দোযখের অগ্নি হইতে পরিত্রাণ পাইবে না। ভাবিয়া দেখ, বিষ কিংবা কোন অহিতকর খাদ্য ভক্ষণ করিলে মানুষের শরীরে পীড়া জন্মে এবং তাহা হইতেই যন্ত্রণার উৎ পত্তি হইয়া থাকে। এমন কখনই নহে যে, যেই চিকিৎসক বিষ ও ক্ষতিকর দ্রব্যের কুফল সম্বন্ধে জানিতে পারিয়া তৎভক্ষণে তোমাকে নিষেধ করিয়াছিলেন। তুমি তাহার নিষেধ অমান্য করতঃ তাহা ভক্ষণ করার দরুন তিনি ক্রুদ্ধ হইয়া তোমার মধ্যে যন্ত্রণা বা রোগ সৃষ্টি করিয়া দিয়াছেন।




তাহা ভক্ষণ করার দরুন তিনি ক্রুদ্ধ হইয়া তোমার মধ্যে যন্ত্রণা বা রোগ সৃষ্টি করিয়া দিয়াছেন।




হে প্রবৃত্তি! তোমার বুদ্ধি ও বিবেচনা শক্তির প্রতি ধিক! তুমি সংসারের নেয়ামত ও ভোগ-বিলাসে মত্ত হইয়া রহিয়াছ এবং সংসারের মোহে পাগল হইয়া আকণ্ঠ নিমজ্জিত হইয়াছ। তুমি আল্লাহ্ তা'আলাকে এমনভাবে ভুলিয়া থাকার কারণ ইহা ব্যতীত আর কিছুই তো দেখা যায় না।




ওরে হতভাগ্য! যদি বেহেশত ও দোযখের অস্তিত্বের প্রতি তোমার ঈমান নাও থাকে, তবে মৃত্যু যে অবশ্যই ঘটিবে। অন্ততঃ এতটুকু কথা তুমি অবশ্যই বুঝিতে পার যে, তুমি যখন মরিবে, তখন সংসারের যাবতীয় নেয়ামত এবং ভোগ-বিলাসের সামগ্রী তোমা হইতে ছিনাইয়া লওয়া হইবে। তখন তুমি তৎসমুদয়ের বিচ্ছেদানলে দগ্ধীভূত হইয়া অশেষ যন্ত্রণা ভোগ করিতে থাকিবে। সংসারের প্রতি তোমার আসক্তি যত প্রবল থাকিবে, বিচ্ছেদ জ্বালাও তোমার হৃদয়ে ততোধিক তীব্র হইবে। বৎস! তোমাকে উপদেশ প্রদান করা আমার কর্তব্য, তাহা মান্য করা না করা তোমার ইচ্ছাধীন। সংসারের প্রতি আসক্তি ও মোহ যত ইচ্ছা নিজ হৃদয়ে দৃঢ় করিয়া লও, কিন্তু এতটুকু কথা স্মরণ রাখিও যে, মহব্বতের মাত্রা যত বৃদ্ধি পাইবে, বিচ্ছেদ যন্ত্রণাও ততোধিক তীব্র হইবে।


হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী (রাহঃ)


(কিমিয়ায়ে সা'আদাত)

Post a Comment

0 Comments