------------------ নফসকে নিয়ন্ত্রণ করার উপায় - পর্ব-৬ |
হযরত ইমাম গাজ্জালী (রাহঃ) -
॥ প্রবৃত্তিকে তিরস্কার করার নিদর্শন ॥ পর্ব -৬
হে প্রবৃত্তি। আল্লাহ্ তা'আলার দরবারে প্রার্থনা করি, তিনি তোমাকে সৎ পথে পরিচালিত করুন। তুমি দুনিয়াপ্রাপ্তির জন্য উহার পাছে পাছে দৌড়িয়া কেন ধ্বংসপ্রাপ্ত হইতেছ? পূর্বপ্রাম্ত হইতে পশ্চিমপ্রান্ত পর্যন্ত সমগ্র বিশ্ব-ভূমণ্ডলও যদি তোমার কুক্ষিগত হয় এবং সমগ্র পৃথিবী ও তন্মধ্যস্থিত সমস্ত পদার্থ তোমাকে সেজ্দা করিতে আরম্ভ করে, তাহাতে তোমার কি লাভ হইল? অতি অল্প সময়ের মধ্যে তুমি এবং তৎসমুদয় বস্তু মাটির সঙ্গে মিশিয়া যাইবে। তোমার পূর্ববর্তী কালে বহু প্রতাপশালী নরপতি সসাগরা পৃথিবীর অধিপতি হইয়া খোদায়িত্বের দাবী পর্যন্ত করিয়া ছিল। আজ তাহাদের সমস্ত স্মৃতি অতীত গর্ভে বিলীন হইয়া গিয়াছে, তাহাদের কথা কেহই স্মরণ করে না। তদ্রূপ তোমার মৃত্যু হইলে তোমার নাম-নিশানা কিছু থাকিবে না। সসাগরা পৃথিবীর অধিপতি হওয়া সোজা কথা নহে, সকলের ভাগ্যে তাহা ঘটে না। পৃথিবীর পশ্চাতে যতই দৌড় ধাপ করিতেছ, সারা জীবনের চেষ্টায় যাহা কিছু লাভ করিবে তাহা সমগ্র বিশ্বের তুলনায় অতি ক্ষুদ্র ও সামান্য হইবে। তাহাও শান্তিপূর্ণ এবং আনন্দদায়ক নহে; বরং নানাবিধ আবিল্যময়, নিকৃষ্ট ও হীন। তবে এমন নিকৃষ্ট পার্থিব রাজত্ব ও সাংসারিক ভোগ-বিলাসের লোভে তুমি মহাশান্তিপূর্ণ চিরস্থায়ী বেহেশতকে কেন হাতছাড়া করিতেছ?
হে প্রবৃত্তি। একটু ভাবিয়া দেখ তো! তোমার সম্মুখে কোন একজন মূর্খ লোক যদি চাকচিক্যময় উজ্জ্বল রত্ন নির্মিত একটি মহামূল্যবান ও চিরস্থায়ী পেয়ালার বদলে মৃত্তিকা নির্মিত ভাঙ্গা পেয়ালা ক্রয় করিয়া লয়, তবে তাহার মূর্খতা ও নির্বুদ্ধিতা দেখিয়া তুমি কেমন উপহাস করিবে? তদ্রূপ মনে কর, দুনিয়া একটি ভাঙ্গা মাটির পাত্র। তুমি বুঝিয়া লও যে, এই ক্ষণভঙ্গুর মৃৎপাত্রটি যে কোন মুহূর্তে তোমার হস্ত হইতে পতিত হইয়া ভাঙ্গিয়া যাইবে। অর্থাৎ, যে কোন মুহূর্তে মৃত্যু আসিয়া দুনিয়ার যাবতীয় সুখ-সম্পদ তোমার হস্ত হইতে কাড়িয়া লইবে। পক্ষান্তরে পরলোকের সুখ-শান্তিপূর্ণ বেহেশত বহু মূল্যবান হীরক নির্মিত চিরস্থায়ী পেয়ালা। দুনিয়ার সুখ-শান্তি, ভোগ-বিলাসরূপ অস্থায়ী মৃৎপাত্রটি গ্রহণ করিলে তুমি সেই চিরস্থায়ী হীরক নির্মিত পেয়ালারূপ বেহেশত কখনও পাইবে না। এখন বুঝিয়া দেখ, যে দুনিয়ার পশ্চাতে পাগলের মত দৌড়াইলে তাহাও হস্তচ্যুত হইল, ওদিকে পরকালের সুখ-শান্তিও ভাগ্যে জুটিল না। তোমার হাতে অবশিষ্ট রহিল অনুতাপ এবং শাস্তি। বল তো এই অনুতাপ-যন্ত্রণা তুমি কেমন করিয়া সহিবে?
যাহা হউক, এরূপে সদা-সর্বদা স্বীয় প্রবৃত্তিকে উপদেশ প্রদান ও তিরস্কার করা প্রত্যেক মানুষের কর্তব্য। তাহাতে স্বীয় কর্তব্য প্রতিপালিত হইবে এবং উপদেশ প্রদান ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম নিজকে উপদেশ প্রদানের কর্তব্যও সমাধা হইবে।
হযরত ইমাম গাজ্জালী (রাহঃ)
(কিমিয়ায়ে সা'আদাত)

0 Comments
Do not post spam link in the comment box