নফসকে নিয়ন্ত্রণ করার উপায় ৬ টি পর্ব ( পর্ব -২ )

 ------------------নফসকে নিয়ন্ত্রণ করার উপায়------------------- 

নফসকে নিয়ন্ত্রণ করার উপায় - পর্ব-২ | 

হযরত ইমাম গাজ্জালী (রাহঃ) -





 ॥ প্রবৃত্তিকে তিরস্কার করার নিদর্শন ॥ পর্ব -২





হে প্রবৃত্তি! নিতান্ত অনুতাপের বিষয় এই যে, সর্বক্ষণ তুমি পাপ-পঙ্কিলে ডুবিয়া রহিয়াছ। এমতাবস্থায় তুমি যদি মনে কর যে, আল্লাহ্ তা'আলা তোমার পাপানুষ্ঠান দেখিতে পাইতেছেন না, তবে তুমি কাফের। আর যদি তুমি এরূপ মনে কর যে, তোমার পাপ কার্য তিনি দেখিয়া থাকেন এবং তাহা জানিয়াও তুমি তাহার দৃষ্টির সম্মুখে পাপানুষ্ঠান করিতেছ, তবে তুমি নিতান্ত ধৃষ্ট, অবাধ্য ও নির্লজ্জ। আল্লাহ তাআলা তোমার পাপ কার্য সম্বন্ধে অবগত আছেন জানিয়াও তাহার দৃষ্টির সম্মুখে পাপানুষ্ঠান করিতে কোন প্রকার ভয় বা সঙ্কোচ করিতেছ না। 




হে প্রবৃত্তি! একটু চিন্তা করিয়া দেখ তো তোমার একজন গোলাম তোমার চোখের সম্মুখে অবাধ্যতাচরণ করিলে তাহার প্রতি তোমার কি পরিমাণ বিরক্তি ও ক্রোধ হয়! এতদসত্ত্বেও কোন্ কথার উপর নির্ভর করিয়া তুমি আল্লাহ্ তা'আলার ক্রোধ হইতে নিরুদ্বেগ ও নিশ্চিত রহিয়াছ? যদি তুমি এরূপ ভুলের মধ্যে পতিত থাক যে, আল্লাহ্ তা'আলার শাস্তি সহ্য করিবার ক্ষমতা তোমার যথেষ্ট রহিয়াছে, সেই ভরসায় বেপরোয়া হইয়া পাপ কার্য করিতেছ, তবে তুমি মহাভুল করিয়াছ। আচ্ছা, তোমার একটি অঙ্গুলি জ্বলন্ত প্রদীপের শিখার উপর ধরিয়া দেখ অথবা প্রখর রোদ্রে তপ্ত বালুকার উপর কিছুক্ষণ বসিয়া দেখ, কিংবা গ্রীষ্মোত্তপ্ত কোন তপ্ত কুঠরির মধ্যে দরজা জানালা বন্ধ করিয়া কিছুক্ষণের জন্য বসিয়া দেখ, তাহা হইলে তোমার অক্ষমতা ও উপায়হীনতার পরিচয় উত্তমরূপে পাইতে পারিবে। আর যদি তুমি এরূপ মনে করিয়া থাক যে, তুমি যাহা কিছু করিতেছ তজ্জন্য তোমার কোন হিসাব-নিকাশও হইবে না বা কোন প্রতিফলও পাইবে না, তবে তুমি আল্লাহ্ তা'আলার পবিত্র ও অকাট্য সত্য কোরআন শরীফ এবং এক লক্ষ চব্বিশ হাজার পয়গম্বরকে অবিশ্বাস করিতেছ এবং সকলকে মিথ্যাবাদী বলিয়া মনে করিতেছ! অথচ আল্লাহ তা'আলা বলিয়াছেনঃ




'যে ব্যক্তি কোন প্রকার মন্দ কার্য করিবে সে উহার প্রতিফল ভোগ করিবে।'


                 (পারা ৫ : সূরা নেসা : রুকু ১৮)


 হে প্রবৃত্তি! তুমি হয়ত এরূপ দুরাশার মোহে ভুলিয়া থাকিবে যে, আল্লাহ্ তা'আলা দয়ালু, তিনি অতীব করুণাময়। তোমার পাপের জন্য তোমাকে শাস্তি প্রদান করিবেন না, তবে তোমার এই উদ্ভট দুরাশার উত্তর কান পাতিয়া মনোযোগ সহকারে শ্রবণ কর সেই করুণার সিন্ধু আল্লাহ্ তাআলা লক্ষ লক্ষ নর-নারীকে দুর্ভিক্ষ কবলে ফেলিয়া ক্ষুধা ও পিপাসার যন্ত্রণায় তিলে তিলে মারেন কেন? নানাবিধ উৎকট ব্যাধির কবলে ফেলিয়া দুঃসহ দুঃখ-কষ্ট প্রদান করিয়া থাকেন কেন? আল্লাহ্ তা'আলা তো খুবই দয়ালু এবং করুণাময়—তবে বিনা কর্ষণে ও বিনা পরিশ্রমে কৃষিক্ষেত্র হইতে শস্য পাইতেছ না কেন?




হে মন! আল্লাহ্ পাককে দয়ালু ও করুণাময় বলিয়া তো খুব বিশ্বাস জমাইয়া লইয়াছ, তবে তোমার আকাঙ্ক্ষা হওয়ামাত্র ধনৈশ্বর্য উপার্জনের নিমিত্ত তোমার সাধ্যানুযায়ী সর্ববিধ কৌশল ও চেষ্টা-তদবীর কেন করিয়া থাক? তখন কেন এরূপ বলিয়া থাক না যে, আল্লাহ্ তা'আলা বড়ই দাতা ও দয়ালু, দুঃখ সহিয়া আমার চেষ্টা-তদবীর করার প্রয়োজন নাই। দয়ালু আল্লাহ তা'আলা স্বয়ং আমার মনস্কাম পূর্ণ করিয়া দিবেন।' হে মন! তোমার বুদ্ধি-বিবেচনার উপর ধিক!




এখন তুমি হয়ত বলিতে পার, আচ্ছা, আমি তর্কে হারিলাম, তুমি জিতিলে, তোমার কথাই ঠিক। কিন্তু আমি কি করিব? আমার যে দুঃখ-কষ্ট ও পরিশ্রম সহ্য করিবার ক্ষমতা নাই। তদুত্তরে আমি বলি—'ওরে নির্বোধ যাহারা বড় বড় গুরুতর কষ্ট সহ্য করিতে সক্ষম নহে তাহাদের পক্ষে ছোট ও সামান্য সামান্য কষ্ট সহ্য করা ফরয ও একান্ত আবশ্যক, যাহাতে আগামীকল্য কিয়ামত দিবসে দোযখের মহাকষ্ট ও ভীষণ শাস্তি হইতে পরিত্রাণলাভ করিতে পার। তুমি অবশ্যই অবগত আছ যে, সমস্ত পয়গম্বর এবং ওলামায়ে কেরাম সংবাদ দিয়াছেন যে, পরকালের অনন্ত শাস্তি ও দুঃখ-কষ্ট হইতে বাঁচিবার জন্য পৃথিবীতে যৎকিঞ্চিৎ ক্ষণস্থায়ী দুঃখ-কষ্ট সহ্য করিতে হইবে। এক দুঃখ কষ্ট না সহিলে অপর দুঃখ-কষ্ট হইতে পরিত্রাণ পাওয়া যায় না। আজ তুমি পৃথিবীতে থাকিয়া ধর্ম-কর্মানুষ্ঠানে এই সামান্য কষ্ট সহ্য করিতে পারিতেছ না, বল তো কাল কিয়ামতের দিবসে দোযখের অপরিসীম যন্ত্রণা, অপূর্ব লাঞ্ছনা, অভাবিত অপমান ও ধিক্কার কেমন করিয়া সহ্য করিবে।'




হজরত ইমাম গাজ্জালী (রাহঃ)--------------------------------

Post a Comment

0 Comments