কোরআন ও বিজ্ঞান : লোহা (মৌলিক পদার্থ) নিয়ে কুরআন ও বিজ্ঞানের মিল তা আলোচনা করা হলো I The similarity of iron in the Qur'an and science

লোহা (মৌলিক পদার্থ) নিয়ে কুরআন ও বিজ্ঞানের মিল তা আলোচনা:

লোহা (মৌলিক পদার্থ) নিয়ে কুরআন ও বিজ্ঞানের মিল তা আলোচনা


লোহা একটি মৌলিক পদার্থ যার পারমাণবিক সংখ্যা ২৬ এবং রাসায়নিক সংকেত Fe। এটি এক প্রকারের ধাতু। ধাতুগুলির মধ্যে প্রাচুর্যের দিক থেকে প্রকৃতিতে অ্যালুমিনিয়ামের পর দ্বিতীয় স্থান লোহার। তবে যেহেতু পৃথিবীর কেন্দ্র লোহা দিয়ে তৈরি তাই পৃথিবীতে লোহার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। তবে খাঁটি লোহা প্রকৃতিতে বিরল।

আমরা অনেকেই মনেকরি অতি পরিচিত মৌল লোহার কোন বিশেষত্ব নেই। এটি পৃথিবীতেই অন্যান্য পদার্থের মত সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু আমাদের ধারনা সম্পূর্ণ ভুল। পৃথিবী তো দুরের কথা খুদ সৌরজগতের কোন স্থানে লোহার একটি অণুও সৃষ্টি হওয়া সম্ভব নয়। তাই লোহা পৃথিবীর অভ্যন্তরে সৃষ্টি হওয়া কোন পদার্থ নয় বরং এটি এসেছে পৃথিবীর বাইরে থেকে।

সর্বপ্রথম ১৮৪৭ সালে বিজ্ঞানি জুল ও রামফোর্ড তাপ গতি বিদ্যার ১ম সূত্র(the 1st low of thermodynamics) প্রদান করেন। এই সূত্রের উপর ভিত্তি করে অণু গঠনের সূত্র, গঠনের এনথালপি বা গঠন এনথ্যালপি দেওয়া হয়। মূল বিষয়টি হ'ল এর উপাদান উপাদান থেকে পদার্থ তৈরি করতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ তাপ অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে। অন্যথায় পদার্থ উত্পন্ন হবে না। উদাহরণস্বরূপ, কার্বন ডাই অক্সাইডের কেবল 1 টি তিল উত্পাদন করতে সর্বনিম্ন 393.5 কিলোজুল (1 কিলোজুল = 1000 জোলস) নির্গত হতে হবে। এর অর্থ হ'ল কার্বন ডাই অক্সাইড এনথ্যালপি 393.5 কেজে হয়।

একইভাবে, কেবলমাত্র 1 টি তিল জল উত্পাদন করতে, 26.5 কিলোজুল তাপ নির্গত করা প্রয়োজনীয়। কারণ জলের এনথ্যালপির কাঠামো 27.5 কিলোজুল। সুতরাং বোঝা গেল যে উপাদানগুলির এনথালপি কাঠামোটি আলাদা। আয়রনের ক্ষেত্রে এটি এত দুর্দান্ত যে, পৃথিবীটিকে একা রেখেই সৌরজগতের যে কোনও স্থানে আয়রনের একক অণু তৈরি করা সম্ভব নয়।

আয়রনের অণু গঠনের বিষয়ে অধ্যাপক আর্মস্ট্রং বলেছিলেন, "সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন মৌলিক পদার্থ গঠনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জেনে গেছেন "। আয়রনের অণু তৈরি করতে যে পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন হয় তা এতো বেশি যে পুরো সৌরজগতের শক্তি এর পক্ষে যথেষ্ট নয়। তারা গণনা করেছিলেন যে আয়রনের একটি অণু সৌরজগতের মোট শক্তির চারগুণ বেশি প্রয়োজন। সুতরাং বিজ্ঞানীরা এখন বলে যে লোহা পৃথিবীতে তৈরি একটি পদার্থ নয়, আয়রন পৃথিবীর বাইরে থেকে আসে (অতিরিক্ত স্থল ধাতু)। আয়রন কেবলমাত্র সূর্যের চেয়ে বড় তারাতে গঠিত হতে পারে যেখানে তাপমাত্রা দশ মিলিয়ন ডিগ্রি কাছাকাছি থাকে। লোহার উৎপত্তি কেবল এ জাতীয় কোনও গলিত তারার বিস্ফোরণের মাধ্যমেই সম্ভব।

নৃবিজ্ঞানীরা এখন স্বীকার করেছেন যে আমাদের সৌরজগতের পুরো শক্তি লোহার একটি পরমাণু উত্পাদন করার পক্ষে যথেষ্ট নয়। এ ছাড়াও তারা বলেছে যে পৃথিবীর তলদেশে একটির পরমাণুর উত্পাদনের জন্য আমাদের সৌরজগতের চারগুণ শক্তির প্রয়োজন হবে। নৃতত্ত্ববিদরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে আয়রন একটি অত্যন্ত জাগতিক বস্তু। যা অন্য গ্রহ থেকে পৃথিবীতে এসেছিল।

কেমিকাল এডুকেশন নামক আমেরিকান এক সাময়িকীতে ১৯৯০ সালের সেপ্টেম্বর সংখ্যায় এবং নিউ সাইন্টিস্ট এর ১৩ জানুয়ারি ১৯৯০ সংখ্যায় বলা হয়েছে। লোহার পরমাণু কণিকাসমূহ সাধ্যাতীত সর্বাধিক ভারী পদার্থ যা মানসম্মত পারমাণবিক প্রজজ্বলনের মাধ্যমে একটি নক্ষত্রে তৈরি হয়েছে। এতে রয়েছে সর্বাধিক সুদৃঢ় নিউক্লিয়াস। লোহাকে সংশ্লেষন জন্য যে শক্তির প্রয়োজন তা পৃথিবীতে সুলভ নয়। 

অর্থাৎ লোহা পৃথিবীতে সৃষ্টি হয়নি এসেছে আকাশ থেকে। এটিই হচ্ছে বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক বক্তব্য। এবার আপনাদের এমন একটি তথ্য প্রদান করবো যা শুনে আপনাদের চোখ কপালে ওঠে যাওয়ার উপক্রম হবে। তথ্যটি হল, লোহার আগমন ও এর অভাবনীয় শক্তি সম্পর্কিত বিজ্ঞানের করা সাম্প্রতিক বক্তব্যটি আজ থেকে ১৪০০ বছর পূর্বে একটি গ্রন্থে সুস্পষ্ট ভাবে আলচনা করা হয়েছে। অবাক হচ্ছেন! অবাক না হওয়ারই বা কারন কি? যেখানে আজ থেকে মাত্র ১৭৩ বছর পূর্বে(১৮৪৭ সালে) বিজ্ঞানি জুল ও রামফোর্ড কর্তিক তাপ গতি বিদ্যার ১ম সূত্র(the 1st low of thermodynamics) প্রতিষ্ঠা লাভ করে, সেখানে আজ থেকে ১৪০০ বছর পূর্বে লোহা অণুর জটিল গঠন পক্রিয়া, অণুটির আভ্যন্তরীণ বিপুল শক্তি ভাণ্ডার, এই মৌলটি পৃথিবীতে সৃষ্টি হয়নি, এটি এসেছে আকাশ তথা সৌর জগতের বাইরে থেকে, এইসব জটিল তথ্য গুলো প্রদান করা কি করে সম্ভব?

এর উত্তর হ'ল যে বইটি 1400 বছর আগে এই সূক্ষ্ম বিষয়গুলি সম্পর্কে তথ্যের মূল উত্স হয়ে দাঁড়িয়েছে তা নিঃসন্দেহে মানুষের লেখা কোনও সাধারণ বই নয়। কারণ কিছু দিন আগে লোকেরা কেবল এই বিষয়গুলি সম্পর্কে জানতে পেরেছিল। সুতরাং এই বইয়ের উত্স হ'ল স্রষ্টা নিজেই। পবিত্র কুরআনের সুরা হাদীদের ৫ 25 নং আয়াতে বলা হয়েছে:

ব্যাখ্যাঃ আয়াতটি তিন ভাগে বিভক্ত করে ব্যাখ্যা প্রধান করা হল।

১]আল্লাহ লোহা পাঠিয়েছেন।

 ব্যাখ্যাঃ এই অংশে আরবি শব্দ "আনজালা" ব্যবহৃত হয় যার অর্থ আকাশ থেকে প্রেরণ বা অবতরণ করা হয়। আরবি শব্দ আঞ্জলা বিশেষ করে আকাশ থেকে বা পৃথিবীর বাইরের থেকে প্রেরিত অর্থ ব্যবহৃত হয়। এর অর্থ হ'ল লোহা পৃথিবীতে তৈরি হয়নি তবে পৃথিবীর বাইরে থেকে এসেছিল।

2] যা অসাধারণ শক্তি আছে।

ব্যাখ্যা: এই অংশে খুব স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয় যে আয়রনের বিশাল অভ্যন্তরীণ শক্তি মজুদ এবং এর গঠনের প্রক্রিয়ায় অপরিহার্য শক্তি প্রয়োজন।

3] এবং মানুষের জন্য অনেক সুবিধা রয়েছে।

ব্যাখ্যা: এই অংশে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন যে লোহা একটি খুব দরকারী ধাতব। যা মানুষের একাধিক সুবিধা নিয়ে আসতে পারে। লোহার এই সকল উপকারিতা আল্লাহ প্রকাশ করেছেন।

এখন নিজের জন্য পরীক্ষা করে দেখুন এবং প্রায় ১৪০০ বছর আগে কোরআনে প্রদত্ত তথ্য এবং বর্তমান বিজ্ঞানের মধ্যে সামান্যতম তফাত খুঁজে নিন। জানি না! কারণ কুরআন ও বিজ্ঞানকে একই উত্স থেকে উদ্ভূত আলোর দুটি রশ্মি বলে মনে হচ্ছে। যাদের ধারা ভিন্ন কিন্তু উৎসমূল এক। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, আমাদের পৃথিবীর একদম মধ্যবর্তী স্থানটি অর্থাৎ পৃথিবীর কেন্দ্র লোহার তৈরি। সূরা হাদিদ (হাদিদ অর্থ লোহা) কোরআনের ঠিক মধ্যখানে অবষ্থিত। কুরআনে মোট ১১৪ টি সূরা আছে। সূরা হাদিদ কুরআনের ৫৭ নং সূরা। অর্থাৎ সূরা হাদিদের অবস্থান একেবারে মধ্যখানে।

চমক এখানেই শেষ হয়নি। আরো আছে। এবার আপনাদের সামনে লোহার জটিল রাসায়নিক গঠন ও লোহা পরমাণুর মধ্যে অবস্থিত মৌলিক কনিকার সংখ্যা সম্পর্কিত কুরআনের দেয়া নির্ভুল তথ্য সম্পর্কে আলোচনা করব।

লোহার পারমাণবিক  বা  এটমিক নাম্বার সংখ্যা ২৬। ‘হাদিদ’ শব্দটির সংখ্যাগত মানও হল ২৬। (হা=৮, দাল=৪, ইয়া=১০, দাল=৪),  যখন আমরা বিসমিল্লাহ  (শুরুর আয়াত) কে আয়াত ধরি, তখন যে আয়াতে ‘লোহাকে পাঠানো হয়েছে’ উল্লেখ করা হয়েছে তা ২৬ তম আয়াতে উপনীত হয়। যেহেতু কোন মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা সমান ঐ পরমাণুর প্রোটন ও ইলেকট্রন সংখ্যা। তাই লোহার পারমাণবিক সংখ্যা ২৬ হওয়ায় লোহা পরমাণুর অভ্যন্তরে ২৬টি প্রোটন ও ২৬টি ইলেকট্রন আছে। আবার আমরা জানি, লোহা পরমাণুর নিঊক্লিয়াসে অবস্থিত নিউট্রন সংখ্যা ৩০।

যেহেতু বিসমিল্লাহ সূরা হাদিদ শুরুর দিকে তেলাওয়াত করতে হয় (সূরা তাওবা ব্যতীত সকল সূরার শুরুতে বিসমিল্লাহ তেলাওয়াত করতে হবে), বিসমিল্লাহ সহ সূরা হাদিদের ৩০ নম্বর আয়াতটি আয়রনে নিউট্রনের সংখ্যা নির্দেশ করে। কুরআন প্রথমে (অপ্রত্যক্ষভাবে গাণিতিকভাবে) আয়রনের পারমাণবিক সংখ্যা, প্রোটনের সংখ্যা, ইলেক্ট্রনের সংখ্যা এবং নিউট্রনের সংখ্যা সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করেছিল, কেন এর ভর বাদ দেওয়া হবে?

আমরা ইতিমধ্যে কুরআন প্রদত্ত তথ্য থেকে শিখেছি যে আয়রনে প্রোটনের সংখ্যা = 26 এবং নিউট্রনের সংখ্যা = 30, এখন আসুন কোরআনে প্রদত্ত তথ্য থেকে গণসংখ্যার সন্ধান করা যাক। আমরা জানি, ভর সংখ্যা = প্রোটনের সংখ্যা + নিউট্রনের সংখ্যা। সুতরাং, আয়রনের ভর = 26 + 30 = 56, আধুনিক রসায়নও বলে যে আয়রনের ভর = 55.75 বা 56, কী আশ্চর্য! আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগে, মহান স্রষ্টা, তাঁর অনুগ্রহে তাঁর সৃষ্টিকে কেবল পরমাণুর বিষয়েই নয়, তার অভ্যন্তরের ক্ষুদ্র কণাগুলি সম্পর্কেও জানিয়েছিলেন। তবে মানব জাতির বড় দুর্ভাগ্য হ'ল তারা কুরআনের যথাযথ মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং ১৪০০ বছর আগে পরিবেশন করা এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি সম্প্রতি আবিষ্কার করেছে।

📘আয়াত

[৫৭:২৫] আল হাদীদ

لَقَد أَرسَلنا رُسُلَنا بِالبَيِّناتِ وَأَنزَلنا مَعَهُمُ الكِتابَ وَالميزانَ لِيَقومَ النّاسُ بِالقِسطِ وَأَنزَلنَا الحَديدَ فيهِ بَأسٌ شَديدٌ وَمَنافِعُ لِلنّاسِ وَلِيَعلَمَ اللَّهُ مَن يَنصُرُهُ وَرُسُلَهُ بِالغَيبِ إِنَّ اللَّهَ قَوِيٌّ عَزيزٌ

বায়ান ফাউন্ডেশন:

নিশ্চয় আমি আমার রাসূলদেরকে স্পষ্ট প্রমাণাদিসহ পাঠিয়েছি এবং তাদের সাথে কিতাব ও (ন্যায়ের) মানদন্ড নাযিল করেছি, যাতে মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে। আমি আরো নাযিল করেছি লোহা, তাতে প্রচন্ড শক্তি ও মানুষের জন্য বহু কল্যাণ রয়েছে। আর যাতে আল্লাহ জেনে নিতে পারেন, কে না দেখেও তাঁকে ও তাঁর রাসূলদেরকে সাহায্য করে। অবশ্যই আল্লাহ মহাশক্তিধর, মহাপরাক্রমশালী।

তাইসীরুল কুরআন:

আমি আমার রসূলদেরকে সুস্পষ্ট প্রমাণসহ পাঠিয়েছি আর তাদের সঙ্গে অবতীর্ণ করেছি কিতাব ও (সত্য মিথ্যার) মানদন্ড যাতে মানুষ ইনসাফ ও সুবিচারের উপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। আমি অবতীর্ণ করেছি লোহা যাতে আছে প্রচন্ড শক্তি আর মানুষের জন্য নানাবিধ উপকার যাতে আল্লাহ পরীক্ষা করতে পারেন আল্লাহকে না দেখেই তাঁকে আর তাঁর রসূলদেরকে কারা (এই লোহার শক্তি দিয়ে ও যাবতীয় উপায়ে) সাহায্য করে। আল্লাহ বড়ই শক্তিমান, মহাপরিক্রমশালী।


Post a Comment

0 Comments