সংশয় থেকে প্রত্যয়

 সংশয় থেকে প্রত্যয়

সংশয় থেকে প্রত্যয়


আমি স্রষ্টার অস্তিতের ব্যাপারে সন্দিহান ছিলাম। এই সন্দেহ যেন আমাকে ভেতর থেকে পুরে খাচ্ছিল এবং আমার মনে হত যে আমাকে কেউ স্রষ্টার অস্তিতে বিশ্বাস করাতে পারবে না। এই সময় টা যেন আমার অন্তরের উপর একটা বোঝা হয়ে ছিল- আমি সারাক্ষন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকতাম।এক প্রর্যায়ে ভাবলাম এই বিষয়ে একটা উপসংহারে পৌঁছাতেই হবে। আমাকে নিশ্চিত হতেই হবে, হয় এটা ঠিক না হয় ওটা। তো আমি নিশ্চয়তায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে বই পড়া শুরু করলাম।আমি বিশাল বিশাল বই পড়া শুরু করলাম কিন্তু তেমন কোনো উপকার পেলাম না। এবং আমি খুব বেশি সময় ধরে বই পড়তাম।হাতের কাছে যা পেতাম পড়তাম।

আপনি বই পড়ার মাধ্যমে আসলে কি খুজছিলেন?

একজন স্রষ্টার অস্তিতের প্রমান খুঁজছিলাম।

সুবহানআল্লাহ ।

কিন্তু মহান আল্লাহ যখন আমার এ ব্যাপারে আন্তরিকতা দেখলেন তিনিই আমাকে সাহায্যে করলেন।  তো, আমার মনে আছে কোন বিষয়টি আমাকে সন্দেহের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্যে করে। এবং আমার অনিশ্চয়তার অবশান হলো। এবং আমি পরিপূর্ণ নিশ্চয়তায় পৌছে গেলাম। তাই আমি সেই দিনটির নাম দিলাম ঈমানের দিন। আমার দৃষ্টিতে সবকিছুই যেন পালটে গেলো। একেবারে সবকিছু।আমার সব বিষণ্ণতা...অর্থাৎ আমি এই গোটা অস্তিত্বকেই নতুন আঙ্গিকে দেখতে আরম্ভ করলাম। যেই মুখ গুলোর দিকে তাকাচ্ছিলাম সেই মুখগুলো যেন কাল থেকে ভিন্ন ছিল।

ডক্টর ফাদেল, প্রথম বিষয় টি কি ছিলো যা আপনাকে অনিশ্চয়তা থেকে হয়ে আসতে সাহায্যে করে?

সত্যি বলতে আমার  এখনো সেই বিষয়টির কথা মনে আছে।প্রথম প্রমানটি আমি পাই খুবই অদ্ভুদ এক প্রাণী নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে।আমি পড়াশোনা করতে করতে বিশেষ এক মশার ব্যাপারে জানতে পারলাম। এদের প্রজনন ঋতুর সময়( অর্থাৎ ব্রিডিং সিজন)। এরা নদী -নালা, খাল-বিলে ডিম পারে। তারা তাদের শরীর থেকে চেপে চেপে একটি তরল বের করে আনে, যা তাৎক্ষনিকভাবে বাতাসে শুকিয়ে যায়। অনেক টা মাকড়সার জাল বা রেশমের মত। সেই শুকিয়ে যাওয়া বস্তু দিয়ে মশাগুলো ছোট ছোট নৌকার মত তৈরী করে।

অর্থাৎ বড় মশা গুলো?

বড় মশাগুলো- অর্থাৎ মা মশাগুলো । তারা এই ছোট ছোট নৌকা বানিয়ে, সেই নৌকাগেুলোর ওপর ডিম পাড়ে। এবং এর পর সেই মা মশা মারা যায়।

আচ্ছা।

মা মশাটি মারা যাওয়ার পরে গিয়ে ডিম ফুটে নতুন মশা বেড়িয়ে আসে। এবং সেই মশাগুলো বড় হওয়ার পর যখন প্রজনন ঋতু সময় হয় , তারাও ঠিক একইভাবে ডিম পারে। অর্থাৎ তারা যখন কীট থেকে মশায় রূপান্তরিত হয়.... এবং যখন প্রজনন ঋতু আরম্ভ হয়। এই মশাটিও চেপে চেপে শরীর থেকে তরল বের করে নৌকার মত তৈরী করে, সেই নৌকার উপর ডিম পারে- ডিম পেড়ে মারা যায়।একটা প্রশ্ন তো মাথায় আসেই, যে এই মশার ভেতর এই তরল কে দিলো, যা বের হওয়ার পর শুকিয়ে যায় এবং তা দিয়ে নৌকা তৈরী করা যায়। কিন্তু তার চেয়েও বড় প্রশ্ন, এই মশাটিকে এভাবে নৌকা বানানো শেখালো কে?  এবং সে কিভাবে ঠিক তার মায়ের  মত করেই নৌকাগুলো বানায়, যখন সে তার মা মশাটিকে কখনো দেখেনি?

চমৎকার পর্যবেক্ষন- সে তার মাকে কখনো দেখেনি!!!   সে তার মাকে দেখলে আমরা বলতে পারতাম সে তার মাকে দেখে শিখেছে। তাহলে তাকে শেখালো কে?

আল্লাহ ! এবং এমনটা না হলে গোটা প্রজাতিটিই বিলুপ্ত হয়ে যেত। সত্যি বলতে, এই বিষয় টি আমাকে ভীষন ভাবে নাড়া দেয়। তাকে ঠিক তার মায়ের মত এই কাজটি করতে কে শেখালো, যখন সে তার মাকে কখনো দেখেনি?  এবং এর পর আরেকটা ঘটনা আপনাকে বলতে চাই।

আমার এক বন্ধু আছে। তার একটা মুরগীর হ্যাচারি আছে।তো তার এক পর্যায়ে ৩০ টা মুরগীর ডিম ছিল আর একটি জল পাখির ডিম ছিল। এবং সবগুলো একটি ব্যাচে রাখার জন্য সে জল পাখির ডিম টি মুরগীর ডিমের সাথে রেখে দিল। সে বললো সে জানে ডিম গুলো কখন ফুটবে। তো ডিম ফুটার সময় সে ডিম গুলোকে পর্যবেক্ষন করছিল। তো সে দেখলো যে ৩০ টি মুরগীর ছানা ডিম থেকে বেরিয়ে আসলো।এবং সেই সাথে জল পাখির ছানাটিও বের হয়ে আসলো।সে বললো যে প্রত্যেকটি মুরগীর ছানা মাঠে চলে গেলো খাবারের সন্ধানে এবং শুধুমাত্র জল পাখির ছানাটিই চলে গেল পানিতে। নিজে নিজেই পানিতে সাতার কাটছে, ডুব দিচ্ছে।   জল পাখির ছানাটি। এই পাখিটি ‍ও তার মাকে দেখেনি?  সে তার মাকে দেখেনি। সে মুরগীর ছানা গুলোর সাথে গেল না কেন? এরপর আমি জানতে পারলাম মৌমাছিরা ষড়ভুজ আকারের কোষ তৈরি করে। এবং আপনি যদি মৌমাছির ডিমগুলোকে এমন জায়গায় রাখেন যে তারা ভুমিষ্ট হওয়ার পর তাদের মাকে দেখতে পারবে না। মৌমাছিগুলো ডিম থেকে বের হয়ে ঠিক একই ভাবে ষড়ভুজ আকারের কোষ তৈরি করে। সে তার মাকে দেখে শেখার ‍সুযোগ না পেয়ে থাকলেও এই বিষয় গুলো আমাকে গভীর ভাবে ভাবিয়ে তোলে।

( Interviewee)

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

তারা কি ভূপৃষ্ঠে ভ্রমণ করে না, যাতে তারা জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন হৃদয় ও শ্রুতিসম্পন্ন শ্রবণের অধিকারী হতে পারে! বস্তুত চক্ষু তো অন্ধ নয়, বরং অন্ধ হচ্ছে তাদের হৃদয়।’ (সূরা হজ : ৪৬)

‘তবে কি তারা লক্ষ্য করে না উটের প্রতি, কীভাবে তা সৃষ্টি করা হয়েছে এবং আকাশের প্রতি, কীভাবে তাকে উঁচু করা হয়েছে এবং পাহাড়সমূহের প্রতি, কীভাবে তাকে প্রথিত করা হয়েছে এবং ভূমির প্রতি, কীভাবে তা বিছানো হয়েছে’। (সূরা গাশিয়া ১৭-২)

Post a Comment

0 Comments